টেকসই উন্নয়ণে নতুন উদ্যোগ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক,প্রতিক্ষণ ডটকম
২০১৫ সালে পথ চলা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পর এবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে চলেছে বিশ্ব। বন শহরে আয়োজিত এক সম্মেলনে এই উদ্যোগের নানা দিক তুলে ধরেন, ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ।
তিনি বলেন, পৃথিবীর অবস্থা ভালো নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব টের পাওয়া যাচ্ছে নানাভাবে। অর্থনৈতিক বৈষম্যও দূর হচ্ছে না। জাতিসংঘের ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস’ বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গত ১৫ বছরে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলো। টেকসই উন্নয়ন তরান্বিত করতে চলতি বছর গোটা বিশ্বের জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হচ্ছে, যার পোশাকি নাম ‘সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ বা এসডিজি। উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত সব দেশ এর মাধ্যমে বর্তমান বিবর্তন প্রক্রিয়াকে টেকসই উপায়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বন শহরে এই এসডিজি-র বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। বিশেষ করে এই লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব, সেই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক বা স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সফল উদ্যোগের দৃষ্টান্ত কীভাবে অন্যান্য জায়গায় প্রয়োগ করা যায়, বক্তারা সে বিষয়েও আলোচনা করেছেন। এই বিবর্তন বা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরকার, প্রশাসন, নাগরিক, জনগণ, শিল্পজগত, এনজিও ইত্যাদি ‘স্টেকহোল্ডার’-দের ভূমিকা কী হবে, সেটাও বড় প্রশ্ন।
একটি বিষয় নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই, মানবজাতির ইতিহাসে আজকের মতো এত সমৃদ্ধি কখনো দেখা যায়নি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই সম্পদের বণ্টন নিয়ে৷ প্রযুক্তি সেই কাজে অনেকটাই সাহায্য করছে। বিশেষ করে মোবাইল প্রযুক্তির বদৌলতে অনেক মানুষ নিজেদের দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত করতে পারছেন৷
আজকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের হাতে সত্যি অনেক ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। যারা সরাসরি ইন্টারনেটের নাগাল পাচ্ছেন না, তাঁরাও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নয়৷ ব্রাজিলের রিও ডি জানেরো শহরে নাগরিক ও প্রশাসনের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছে ‘মেউ রিও’ বা ‘আমার রিও’ নামের এক প্রতিষ্ঠান৷ তার প্রধান মিগেল লাগো জানালেন, নাগরিকদের শামিল করা বড় এক চ্যালেঞ্জ৷ বিশেষ করে যারা ‘সিস্টেম’ বা প্রচলিত শাসনব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের আবার সক্রিয় করে তোলা কঠিন৷ তাই প্রশ্নটা প্রযুক্তি নয়, মানসিকতার৷
বর্তমান বিবর্তন প্রক্রিয়ায় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ৷ তার মতে, ডয়চে ভেলে বিশ্বব্যাপী তার পরিসেবার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরছেন। শুধু সংবাদ শিরোনামের ঘটনা ও তার বিশ্লেষণ নয়, স্থানীয় পর্যায়ের নানা সফল উদ্যোগও গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে ডয়চে ভেলে, যা বাকিদেরও প্রেরণা যোগাতে পারে। এ ক্ষেত্রে সহজ ভাষার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ লিমবুর্গ-এর মতে, উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সব ‘স্টেকহোল্ডার’-দের বোঝাতে হবে, তারা কীভাবে এর ফলে উপকৃত হচ্ছে। তা না হলে তাদের মন জয় করা যাবে না৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই মুহূর্তে একাধিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ইউরোপীয় কমিশনের কর্মকর্তা মিশায়েল কার্নিচনিশ ইউরোপের দোরগড়ায় সিরিয়া, লিবিয়াসহ একাধিক সংকটের কথা মনে করিয়ে দেন৷ তার মতে, চারিদিকে স্থিতিশীলতার অভাব থাকলে ইউরোপও তা থেকে বেশিকাল সুরক্ষিত থাকতে পারে না৷ তাই ইউরোপকেও উন্নয়ন সম্পর্কে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে৷ সূত্র: ডিডব্লিউ
প্রতিক্ষণ/এডি/সালাহউদ্দিন